আলোকিত নলছিটি ডেস্ক : ভেজালের এই রমরমা বাণিজ্যের মধ্যে খাঁটিমানের নিশ্চয়তা পেয়ে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় বেশ সাড়া ফেলেছে আ. রব সরদারের আখের রস।
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার কুশঙ্গল ইউনিয়নের সরহমহল গ্রামের বাসিন্দা তিনি। নিজ গ্রামে ৮০ শতাংশ জমিতে আখের চাষ করেছেন মো. রব সরদার।
নিজের আখক্ষেতের পাশেই বিক্রি করছেন আখের রস। আখক্ষেতে ক্রেতা নিজের পছন্দমতো আখ পছন্দ করে কেটে পাশেই রস তৈরির মেশিন দিয়ে রস তৈরি করে পান করতে পারছেন। তাই ক্রেতা পাচ্ছেন খাঁটিমানের পণ্যের নিশ্চয়তা। আশপাশের এলাকার মানুষ তার আখের রসের একটু স্বাদ নিতে ছুটে আসছেন।
আ. রব পেশায় সরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত হিসেবে আছেন। চাকরির পাশাপাশি ২০২০ সালে একবার শখের বসে আখের চাষ করেন। সেখানে ভালো সফলতা পাওয়ায় নলছিটি কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তা নিয়ে আবারও করেছেন আখের চাষ। সঙ্গে যোগ করেছেন ক্ষেতের পাশেই রস তৈরির মেশিন। তাতেই সাড়া পেয়েছেন সাধারণ মানুষজনের।
আ. রব সরদার বলেন, নলছিটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তা প্রথমে অল্প একটু জমিতে একটি প্রদর্শনীর মাধ্যমে আখ চাষ করি। সেখানে তারা আমাকে উচ্চফলনশীল বিএসআরআই-৪২ জাতের আখ বীজ সরবরাহ করেন। সেই সময় ভালো ফলন পাওয়ায় আবারও জমির পরিমাণ বাড়িয়ে আখের চাষ করি। আলহামদুলিল্লাহ ফলন বেশ ভালো হয়েছে। আমার এখানে প্রায় ৮০ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। যাতে আমার প্রায় মজুরি ও আনুষঙ্গিক খরচসহ ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আমি প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার টাকার আখের রস বিক্রি করছি। এখন পর্যন্ত আমার ১ লাখ টাকার আখের রস বিক্রি হয়েছে আরও ৫ লাখ টাকার আখের রস বিক্রি হবে বলে আমি আশাবাদী। এ ছাড়া কেউ যদি খাটি আখের গুড় পেতে চায় তাহলে সেটা অগ্রিম অর্ডার নিয়ে আমি তৈরি করে দেই। প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করি।
তিনি আরও জানান, শুধু নলছিটি উপজেলাবাসী না, ঝালকাঠি সদর, পিরোজপুর ও বরিশাল সদর থেকেও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ তার এখানে রস খেতে আসেন। বিদ্যালয়ের ছুটির সময়ে তিনি এখানে সময় দেন। এ ছাড়া তার একজন সহযোগী সার্বক্ষণিক এখানে রস বিক্রিতে নিয়োজিত থাকেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াসিন আহমেদ নাজিম বলেন, আমাদের এলাকায় এখন ভেজাল মুক্ত আখের রস পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে টাকা হলেও খাটি মানের পণ্য পাওয়া অনেক অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। লোভী ব্যবসায়ীদের জন্য সাধারণ মানুষজন ভেজালমুক্ত খাবার খেতে পারছেন না। তবে সেই শংকার মধ্যেই আমাদের রব ভাই ক্ষেত থেকেই আখ কেটে খাটি ভেজালমুক্ত আখের রস খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এসে আখের রস খেয়ে যাচ্ছে আবার অনেকেই পরিবারের জন্য নিয়েও যাচ্ছেন। তিনি সাশ্রয়ী দামেই বিক্রি করছেন। প্রতি গ্লাস রস তিনি মাত্র ২০ টাকা করে বিক্রি করছেন, যা বর্তমান বাজার অনুযায়ী মানানসই দাম বলা যায়।
নলছিটি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সানজিদ আরা শাওন বলেন, কৃষক আ. রব সরদার তার জমিতে প্রথমে দার্জিলিং কমলা ও মাল্টা চাষ করেছিলেন কিন্তু সেই সময় তিনি ভালো ফলন পাননি। যাতে তিনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। পরবর্তীতে আমাদের পরামর্শে তিনি উন্নত জাতের আখ চাষ শুরু করেন এবং ভালো ফলনও পেয়েছেন। এবার তিনি আর্থিকভাবে বেশ ভালো লাভবান হবে বলে আমরা আশা করছি। আমাদের কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তারা তাকে নানা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে থাকেন। এ ছাড়া তিনিও নিয়মিত আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ করে তার আখ ক্ষেতের ভালো-মন্দ অবহিত করেন। তার আখ চাষ আরও সম্প্রসারণ করতে নলছিটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তাকে সার্বক্ষণিক সহায়তা দিয়ে যাবে।